ডক্টর সৈয়দ আবু তাহের:
ফতেয়াবাদস্থ বটতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ফতেয়াবদ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক,চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আইএসসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে কৃতিত্বের সাথে এমএসসি পাস করেন। এরপর চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। উচ্চতর ডিগ্রী লাভের জন্য আমেরিকা গমন করেন। সেখানে বিরল মৃত্তিকার উপর গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করে সম্মানের অধিকারী হন। তিনি আমেরিকান ক্যামিক্যাল সোসাইটির কর্তৃক ৪০ হাজার ডলার পুরস্কারে ভূষিত হন। আমেরিকা ফিজিক্যাল এন্ড ক্যামিক্যাল সোসাইটি, আন্তর্জাতিক বিরল মৃত্তিকা গবেষণা সম্মেলন এর সদস্য। তিনি আর্ন্তজাতিক অভিধানে প্রখ্যাত অধ্যাপক ও পদার্থ বিজ্ঞানী হিসেবে স্থান দখল করেছেন।
প্রফেসর ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত :
হাটহাজারীর ধলই গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যয়ণ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএসএস (সম্মান) ও এমএসএস ডিগ্রী অর্জন করেন। নেদারল্যান্ড IDS থেকে MSএবং ভারতের জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে PhD ডিগ্রী অর্জন করেন।
প্রফেসর ফজলুল কাদের চৌধুরী :
চট্টগ্রামের প্রখ্যাত আইনজীবী মরহুম আবদুল কাদের এবং আনোয়ারা বেগম এর দ্বিতীয় সন্তান প্রফেসর অধ্যক্ষ ফজলুল কাদের চৌধুরী। জন্ম ২২ জানুয়ারি ১৯৪৩ সালে গড়দুয়ারায়। চট্টগ্রামে সরকারি মুসলিম হাই স্কুল ও চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যয়ণ শেষে সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৬৪ সালে এমএ পাস করেন। চট্টগ্রাম সরকারী সিটি কলেজে ১৯৬৫ সালে শিক্ষকতা জীবন শুরু। এরপর সরকারী বাণিজ্য কলেজ, চট্টগ্রামে তিন বছর শিক্ষকতা করার পর দীর্ঘ তেইশ বছর চট্টগ্রাম সরকারী কলেজে প্রভাষক থেকে শুরু করে শেষে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রাম কলেজে থাকার সময়েই বিভিন্ন কলেজের জাতীয়করণ সম্পর্কিত পরিদর্শন টিম এবং তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। পাকিস্তান ইনষ্টিটিউট অব ইন্ডাষ্ট্রিয়াল একাউন্টস এবং ফেলো, ব্যাংকার ইনষ্টিটিউটের চট্টগ্রাম শাখার অধ্যাপক, ইষ্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের অফিসার্স ট্রেনিং, ফার্মের ইনস্ট্রাক্টর, রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর ব্যবস্থাপনা ফার্মের ফ্যাকালটি সদস্য, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন ট্রেনিং সেন্টারের ফ্যাকালটি সদস্য এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমীর রিসোর্স পার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক শ্রেণীর পাঠ্য অর্থনীতি বিষয়ক গ্রন্থের লেখক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বব্যাংক, বিআইডিএস এবং নিপা আয়োজিত সেমিনার ও ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেছেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ১৯৮০ সালে ইউএনডিপি কর্তৃক আয়োজিক কর্মসূচীতে ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ভ্রমণ করেন। ১৯৮২ সালে এসকাপ এবং জাপানের সিটি অব ইয়াজোমার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তাছাড়া থাইল্যান্ড, হংকং, ভারতে শিক্ষা সফরে অংশগ্রহণ করেছেন। শিক্ষকতা এবং শিক্ষা প্রশাসনে তাঁর অসমান্য দক্ষতার স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৫ সালে কলেজ পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মর্যাদা লাভ করেন। অধ্যক্ষ হিসেবে ঢাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে অবসর গ্রহণ করেছে। ১৯৬৮ সালে হাটহাজারী কলেজ প্রতিষ্ঠালগ্নে অবৈতনিক শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। হাটহাজারী ডায়বেটিকস হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বর্তমানে উক্ত প্রতিষ্ঠানের সভাপতি পদে দায়িত্বরত আছেন। ২০১২ সনে ৮ ডিসেম্বর পরলোক গমন করেন।
ড. মুহম্মদ ইউনুস :
হাটহাজারীর নজু মিয়ার হাটের নজু মিয়া সওদাগরের উত্তরপুরুষ মরহুম হাজী দুলা মিয়া সওদাগরের সুযোগ্য পুত্র ড. মুহম্মদ ইউনুস। নোবেল পুরস্কার লাভ করে তিনি আমাদেরকে গৌরবের আসনে বসিয়েছেন। জন্ম ২৮ জুন ১৯৪০ খ্রিঃ হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামে। তিনি শহরের বলুয়ার দিঘী স্কুল থেকে প্রাইমারী, এম ই স্কুলে ৫ম ও ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে অধ্যায়ন করে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল হতে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম কলেজ হতে ইন্টারমিডিয়েট পাশের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে ১৯৬১ সালে এমএ পাস করে। ১৯৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভেন্ডারবিলট বিশ্ববিদ্যালয় হতে পিএইচডি লাভ করেন। কলেজ জীবন থেকে তার লেখালেখি শুরু। চট্টগ্রাম কলেজ বার্ষিকী অন্বেষায় ও কোহিনুর পত্রিকায় তাঁর লেখা ছাপা হতো। তৎকালীন সাহিত্য পত্রিকা উত্তরণের সহসম্পাদকের দায়িত্বপালন করেন। তাঁর গবেষণা মূলকগ্রন্থ Banker for the poor, micro lending and the Battle against world poverty ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত হয়। চট্টগ্রাম কলেজে ১৯৬২ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ খ্রিঃ পর্যন্ত আমেরিকার মিটসু বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক পদে, ১৯৭১ খ্রিঃ বাংলাদেশ সরকারের ডেপুটি চীফ ট্রেনিং কমিশনে এবং ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ খ্রিঃ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৯ খ্রিঃ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের রুরাল ইকোনমিক্স প্রোগ্রামের ডাইরেক্টর হিসেবে কাজ করতঃ ১৯৭৫ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রজেক্ট শুরু করেন। ১৯৮৬ সালে প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাঁর এই গ্রামীণ ব্যাংকের সুবাদে ক্ষুদ্র ঋণ এখন বিশ্বের দরবারে এক আলোচিত ধারণা। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহম্মদ ইউনুস। তিনি একজন অর্থনীতিবিদ এবং গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকান্ডের অর্থনীতি বিষয়ক হলেও তিনি শান্তিতে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী তথ্য বেকার গ্রামের মহিলাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর করতে তাঁর কর্মের স্বীকৃতির মাধ্যমে তাঁকে ২০০৬ সালে দেয়া হয়েছে নোবেল শান্তি পুরস্কার। তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের মডেল ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পৃথিবীর ১১০টি দেশে সম্প্রসারিত হয়েছে। হাটহাজারী জোবরা গ্রাম থেকে যার কার্যক্রম ১৯৭৬ সালে শুরু হয়েছে তাঁর বিশ্বজনীন স্বীকৃতি এই নোবেল শান্তি পুরস্কার । এছাড়াও ১৯৭৮ খ্রিঃ জোবরায় তেভাগা খামার স্থাপন করে কৃষি ক্ষেত্রে নবযুগের সূচনার জন্য প্রেসিডেন্ট পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ১৯৮৪ সালে ফিলিপাইনের র্যামন ম্যাগসাই পুরস্কার, ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার, ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির স্বাধীনতার পুরস্কার, ১৯৮৯ সালে সুইজারল্যান্ডের আগা খান পুরস্কার, ১৯৯৩ সালে শ্রীলংকার শাহাবেদন পুরস্কার, ১৯৯৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিউমেনি টেরিয়াল পুরস্কার, ১৯৯৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখাদ্য পুরস্কার, ১৯৯৪ সালে আমেরিকার পিফেফার শান্তি পুরস্কার, ১৯৯৭ সালে নরওয়ের হেলফ পুরস্কার, ম্যান ফর পিস, ১৯৯৮ সালে সিডনি শান্তি পুরস্কার, জাপানের অজাকি পুরস্কার, ভারতের ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার, ২০০০ সালে জর্দানের কিংলিডারশিপ, বাংলাদেশের আইভি গোল্ড, ২০০১ সালে গ্রান্ড প্রাইজ জাপান, ভিয়েতনামের হো-চি-মিন, ২০০২ সালে মহাত্মা গান্ধী, ২০০৩ সালে সুইডেনের ভলবো,২০০৪ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দি ইকোনোমিষ্ট, ২০০৫ স্পেনের জষ্টিস বহু পুরস্কার পেয়েছেন। এশিয়ার উইক তাঁকে শ্রেষ্ঠ দশ বাঙালীর অন্যতম এবং আনন্দ বাজার পত্রিকার ২০০৬ সনে পশ্চিমবঙ্গের সহ সারা বিশ্বের ২০ জনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বাঙালী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস