হালদা নদী বাংলাদেশের একমাত্র কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র। আবহমানকাল থেকে স্থানীয় জেলে এবং ডিম সংগ্রাহকরা প্রতি বছর এপ্রিল থেকে ডিম সংগ্রহ করেন এবং পোনা মাছ সারাদেশে সরবরাহ করে থাকেন।
হালদা নদীতে ডিম সংগ্রহ:
হালদার ডিম সংগ্রহের কৌশল সম্পূর্ণ স্থানীয়। তাদের দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান থেকে স্থানীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে ডিম সংগ্রহ করে থাকে। এই প্রচলিত পদ্ধতির মাধ্যমে হালদায় মাছ যে পরিমান ডিম দেয় তার মাত্র ২০-২৫% সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। এই পদ্ধতির সাথে কিছু প্রযুক্তির জ্ঞান এবং বৈজ্ঞানিক ধ্যান ধারনার সমন্বয় করতে পারলে অধিক পরিমাণ ডিম সংগ্রহ সম্ভব হবে। এই প্রচলিত পদ্ধতিতে ডিম সংগ্রহের জন্য একটি কাঠের নৌকা, ২-৩ জন মানুষ, ১টি ডিম ধরার জাল, ২টি নোঙ্গর, ২টি বড় বাঁশ, ২টি বড় প্লাস্টিক বালতি ইত্যাদি। সংগৃহিত ডিম নৌকার মধ্যবর্তী খোলার মধ্যে দুইপার্শ্বে কাঠ ও মাটি দিয়ে বিশেষ ভাবে ১টি চার কোণা আকৃতির প্রকোষ্ঠ তৈরি করে রাখা হয় যাকে স্থানীয় ভাবে “গুদি” বলে। প্রতি গুদিতে ২৫ থেকে ৩০ বালতি (১০/১২ লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন) ডিম রাখতে পারে। এই গুদি বা প্রকোষ্ঠের ভিতর ১টি সুতির মার্কিন কাপড় বিছানো থাকে। এই কাপড়ের উপর ডিম রাখে। এই কাপড় দেয়ার ফলে ডিমের পানির পরিবর্তন ও কুয়াতে পরিবহণে সুবিধা হয়। নৌকার প্রকোষ্ঠে থাকা অবস্থায় ডিম ও পানির পরিমাণ হবে সমান। প্রতি ঘন্টা পর পর পানি পরিবর্তন করতে হবে, না হলে অক্সিজেন স্বল্পতা এবং পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ডিম নষ্ট হয়ে যেতে পারে। প্রচলিত পদ্ধতিতে ডিম সংগ্রহের অসুবিধা হচ্ছে –প্রথমতঃ নদী থেকে খুবই কম পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করতে পারে (২০-২৫%)। অবশিষ্ট ডিম ৭/৮ ঘন্টার মধ্যেই অর্থাৎ রেণু ফোটার আগেই সমুদ্রের লোনা পানিতে চলে যায়। ফলে সব ডিম নষ্ট হয়ে যায়। দ্বিতীয়তঃ একটি নৌকার জন্য যে পরিমাণ ব্যয় হয় (নৌকা বাবদ ২৫,১০০ টাকা, শ্রমিক বাবত ১১,০০০ টাকা) তাতে জেলেদের চড়া সুদে কর্জ নিতে হয়। প্রতি নৌকার সংগৃহিত ডিম থেকে রেণু উৎপাদনের মাধ্যমে যে আয় হয়, তাতে খরচের সাথে সামঞ্জস্য থাকে না। ফলে দরিদ্র জেলেরা ডিম সংগ্রহের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। চড়া সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়ে এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িত হচ্ছে। তাই ডিম সংগ্রহকারীর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। তৃতীয়তঃ ডিম সংগ্রহের কাজ অতিরিক্ত শ্রম নির্ভর। বিগত ৬-৭ বছর ধরে ডিমের পরিমাণ খুবই কম পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু প্রতি নৌকার জন্য ২/৩ জন লোক ছাড়া ডিম সংগ্রহ সম্ভব নয়। তাদের এই শ্রমের বিনিময়ে যে পরিমাণ ডিম আহরিত হয় তা শ্রমের তুলনায় অতি নগন্য বলা চলে।
ডিম ফুটানো:
নদী থেকে সংগৃহিত ডিম সম্পূর্ণ স্থানীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে মাটির গর্তে ফটানো হয়। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের মাধ্যমে নদীর পাড়ে চার কোনা বিশিষ্ট মাটির গর্ত তৈরী করা হয়। এই গর্তের আকার স্থান ভেদে বিভিন্ন সাইজের হয়ে থাকে। সাধারণত: ৮-১৬ ফুট দৈর্ঘ্য ৬-১০ ফুট প্রস্থের এবং ৩-৪ ফুট গভীরতার হয়ে থাকে। এই মাটির গর্ত গুলোতে মশারীর কাপড়ের উপর ডিম রেখে ৪ দিন পর্যন্ত পরিচর্যার মাধ্যমে রেণু উৎপাদন করা হয়। ৪ দিন পর্যন্ত পরিচর্যার মাধ্যমে রেণু উৎপাদন করা হয়। ৪ দিন অর্থাৎ ৯৬ ঘন্টা পর এই রেণুগুলো বিক্রয় করা হয়। ২০০৯ সালে ৪ দিন বয়সের প্রতি কেজি রেণুর বাজার মূল্য ছিল প্রায় ৬০-৬৫ হাজার টাকা।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস